নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা বিলুপ্তপ্রায় ৩১ প্রজাতির মাছ ফিরিয়ে এনেছেন কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠা করেছেন লাইভ জিন ব্যাংক। ময়মনসিংহ জিন ব্যাংকে এক বছরে এখন পর্যন্ত ৯৮ প্রজাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। যে মাছ শোভা পাচ্ছে এক পুকুরে।
দেশের মিঠাপানিতে যে ২৬০ প্রজাতির মাছ মেলে, তার মধ্যে ১৪৩ প্রজাতিই ছোট মাছ। এরমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ৬৪ প্রজাতি। এসব মাছ প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএফআরআই।
একই সঙ্গে নীলফামারীর সৈয়দপুর জিন ব্যাংকে এখন সংরক্ষিত আছে ৪০ প্রজাতি। তিস্তা অববাহিকার মাছ সেখানে বেশি। এই জিন ব্যাংকে এমন কিছু মাছ আছে, যা আবার ময়মনসিংহ জিন ব্যাংকে নেই। সব মিলিয়ে ১৪৩ প্রজাতির মধ্যে এখন সংরক্ষিত আছে শতাধিক মাছ। সৈয়দপুর হবে ময়মনসিংহ জিন ব্যাংকের রেপ্লিকা। ফলে ময়মনসিংহে কোনো ধরনের বিপর্যয় ঘটলেও মাছগুলো হারিয়ে যাবে না।
মাছের জার্মপ্লাজম (জাত বা প্রকার) সংরক্ষণের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক একটি আধুনিক ধারণা। জিন ব্যাংক মূলত কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক উপাদানের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ যখন হুমকির মুখে পড়ে তখন জিন ব্যাংকের প্রয়োজন হয়।
প্রাকৃতিক উৎসে কোনো মাছ হারিয়ে গেলে সেসব মাছ পুনরুদ্ধারের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক থেকে ব্যবহার করা যাবে। সেক্ষেত্রে লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট মাছকে হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে প্রকৃতিতে।
মৎস্য বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পাতে ফেরা ৩১ প্রজাতির পাশাপাশি আগামী এক বছরের মধ্যে আরও আট প্রজাতির মাছ- কাজলি, কুর্শা, গাঙ টেংরা, বাইলা, জারুয়া, বোল, আঙরা ও ঘারুয়া পাতে ফেরার অপেক্ষায়। এর মধ্যে জারুয়া, বোল, আঙরা ও কুর্শা মূলত তিস্তা নদীর মাছ।
বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রেও বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। তিস্তার মাছগুলো নিয়ে কাজ করছে সৈয়দপুর কেন্দ্র।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কয়েকটা প্রযুক্তি দিয়ে কাজ করতে হয়। প্রজনন প্রযুক্তি প্রথমে বের করতে হবে। এরপর কালচারের প্রযুক্তি। এজন্য দু’তিনটি কাজ আমাদের একসঙ্গে করতে হয়। নার্সারি প্রযুক্তি। ছোটমাছ বাঁচানো, রক্ষা করা কঠিন।
প্রজাতি ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, নদী থেকে মাছ আনার পর ডেমোনেস্ট্রেশন করতে হয়। পুকুরের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কীভাবে এরা খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, সেটা দেখতে হয়। যেসব মাছ স্রোতের মধ্যে ডিম ছাড়ে সেগুলোকে পুকুরে অভ্যস্ত করতে সময় লাগে। অনেক সময় দুই বা চার বছর লেগে যায় স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে। অনেকসময় নদী ভিজিট করে বিচরণক্ষেত্র দেখে পরে কৃত্রিম স্রোত তৈরি করে কাজ করা হয়।
বিএফআরআই সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে পুকুরে দেশি ছোট মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৬৭ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আড়াই লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়। অর্থাৎ গত ১০ বছরে দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে চারগুণ।
সময় জার্নাল/এলআর